স্বদেশ ডেস্ক:
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত শাহবাগীদের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে আলোচনা-সমালোচনায় আসা কওমি মাদ্রাসাভিত্তিকি ‘অরাজনৈতিক’ সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ কোন্্ পথে অগ্রসর হচ্ছে তা নিয়ে সংগঠনের ভেতরেই চলছে জোর আলোচনা। গত ১৯ আগস্ট হেফাজতের আমির হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরীর মৃত্যুর পর মহিবুল্লাহ বাবুনগরীকে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকেই মূলত এ আলোচনার সূত্রপাত।
হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাকালীন কমিটিতে সিনিয়র নায়েবে আমির ছিলেন ফটিকছড়ির নানুপুর মাদ্রাসার মহাপরিচালক শাহ মহিবুল্লাহ বাবুনগরী। ওই কমিটির আমির ছিলেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী।
হেফাজতের সাবেক কমিটির একজন নায়েবে আমির জানান, ৮৭ বছরের মহিবুল্লাহ বাবুনগরী সম্পর্কে জুনাইদ বাবুনগরীর মামা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি দিলে আল্লামা শফী ঢাকায় শোকরানা মাহফিলের আয়োজন করেন। ওই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে মহিবুল্লাহ বাবুনগরী ২০১৯ সালে পদত্যাগ করেন। যদিও তার পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছিল কিনা তা কখনই স্পষ্ট করেননি আল্লামা শফী। গত বছর সেপ্টেম্বরে শফী মারা গেলে নভেম্বরের কাউন্সিলে গঠিত হেফাজতের কমিটিতে প্রধান উপদেষ্টা করা হয় মহিবল্লাহ বাবুনগরীকে।
হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ও শফীপন্থিদের অন্যতম নেতা মঈন উদ্দিন রুহী আমাদের সময়কে বলেন, মহিবুল্লাহ বাবুনগরী সরকারবিরোধী কট্টরপন্থি হিসেবে বিভিন্ন সময় আলোচিত হন। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দনি কাদের (সাকা) চৌধুরীর জানাজায় ইমামতি করে তিনি আলোচনায় আসেন। তিনি মুফতি ফজলুল হক আমিনীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোটের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। তবে ইসলামী ঐক্যজোট বিএনপি জোট থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর তিনি পদত্যাগ করেন।
মইন উদ্দিন রুহী বলেন, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের বাবুনগর গ্রামে জন্ম নেওয়া মহিবুল্লাহ বাবুনগরী ফটিকছড়ির আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগরের (বাবুনগর মাদ্রাসা) দীর্ঘদিন মহাপরিচালকের দায়িত্বে থাকলেও চট্টগ্রামরে বাইরে তেমন প্রভাব কখনো ছিল না। হেফাজতে ইসলামের বর্তমান মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদীর বাড়িও ফটিকছড়ি। মহিবুল্লাহ বাবুনগরী তার প্রয়াত ভাগিনা জুনায়েদ বাবুনগরীর বলয়ের আস্থাভাজন হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পেয়েছেন।
মহিবুল্লাহ বাবুনগরী ভারপ্রাপ্ত আমির হওয়ায় হেফাজতের চলমান দুই ধারার বিভক্তি থেকেই গেল। সদ্য প্রয়াত জুনায়েদ বাবুনগরীর মতো তার মামা মহিবুল্লাহ বাবুনগরীর বিরুদ্ধেও সরব রয়েছেন তারা। কারণ গত এক বছরে দুইবার হেফাজতের কমিটি হলেও তাতে শফীপন্থিদের জায়গা হয়নি। এর পাশাপাশি সরকারি নানা চাপে পড়ে হেফাজতে ইসলামকে কতটুকু নেতৃত্ব তিনি দিতে পারবেন তা নিয়েও সংগঠনটির ভেতরে চলছে আলোচনা। এ অবস্থায় শক্তিশালী একটি অংশ চায় দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে হেফাজতের নতুন আমির নির্বাচন করতে। ওই আমির যে কোনো শর্তে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকেই নির্বাচিত হতে হবে বলেও তাদের কঠোর অবস্থান রয়েছে। গত ১৯ আগস্ট হেফাজতের আমির হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরীর মৃত্যুর পর ওইদিনই মহিবুল্লাহ বাবুনগরীকে ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে ঘোষণা দেন সংগঠনটির মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী।
সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর মোহাম্মদ ইদরীস জানান, হেফাজতের জ্যেষ্ঠ নেতা ও দেশের শীর্ষ আলমদের মতামতের ভিত্তিতে গঠনতন্ত্র মোতাবেক আমির নির্বাচিত হবেন। হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে হাটহাজারী মাদ্রাসাকেন্দ্রিক। তাই হাটহাজারী মাদ্রাসার জ্যেষ্ঠ মুরব্বিদের মধ্যে কেউ একজন এ দায়িত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এর আগে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা ছালাহ উদ্দিন নানুপুরী বলেছিলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সবার মতামতের ভিত্তিতে নতুন আমির নির্বাচনের বিষয়টি ফয়সালা করা হবে।